মানিব্যাগটা হাতে নিতেই বুঝতে পারলাম এখান থেকে বেশ কিছু টাকা হাত সাফাই হয়েছে। গুনে দেখি দুইশো টাকা মতো গায়েব। আমার মানিব্যাগ থেকে টাকা গায়েব হওয়ার ঘটনা অবশ্য নতুন কোন ব্যাপার নয়। এই ঘটনা এর আগেও বহুবার ঘটেছে। আর টাকা গায়েবকারীর পরিচয়ও আমার অজানা নয়। টাকা গায়েবকারী হচ্ছে স্বয়ং আমার ছোটবোন রিমি!
বাড়ীর বড় ছেলে হওয়ার এই হচ্ছে সমস্যা। নিজের বলতে কিছু থাকেনা। টাকা থেকে শুরু করে সবকিছু ছোট ভাই বোনদের দখলে চলে যায়!
রিমি আজ সকালবেলা আমার মানিব্যাগ থেকে দু'শো টাকা মেরে দিয়েছে এটা অবশ্যই বড় একটা সমস্যা। কিন্তু এই মূহুর্তে এই সমস্যাটা নিয়ে আমি মাথা ঘামানোর কোন আগ্রহ পাচ্ছিনা। কারণ আমি অলরেডি এরচেয়ে বড় একটা সমস্যায় আছি!
সমস্যা ঘোরতর। সকালে ঘুম থেকে উঠে মোবাইল হাতে নিতেই মৃন্ময়ীর মেসেজটা পেলাম। মেসেজে মৃন্ময়ী আমাকে লুচু সম্বোধন করে লিখেছে, সে আর কিছুতেই আমার সাথে রিলেশন রাখতে চায় না। এবং আমি যেন কখনোই কোনভাবে তার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা না করি। তারপর ফেসবুক থেকে শুরু করে হোয়াটস এপ পর্যন্ত সব জায়গাতে সে আমাকে ব্লক দিয়ে রেখেছে। তার ফোনে কল দিয়েও কোন রেস্পন্স পাচ্ছিনা। মেসেজেরও কোন রিপ্লাই পাচ্ছিনা!
মৃন্ময়ীর আমাকে লুচু বলার কি কারণ থাকতে পারে সেটা আমার মাথায় আসছেনা। সে কি মনে করে এরকম একটা মেসেজ লিখলো তার কারণও আমার কাছে পরিষ্কার না। মৃন্ময়ীর সাথে যোগাযোগ না হওয়া পর্যন্ত এই রহস্যের সমাধান হবে না।
অনেকবার ট্রাই করার পর দুপুরের পর করে অবশেষে মৃন্ময়ী আমার ফোন ধরলো। সে আমার কোন কথাই শুনতে চায় না। অবশেষে অনেক কিছুর দোহাই দিয়ে তাকে বিকেলে আমার সাথে একবার দেখা করার জন্য রাজী করালাম কোনমতে।
মৃন্ময়ী রেগে অগ্নিমূর্তি ধারণ করে আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। আমি বোকার মতো তাকিয়ে আছি তার দিকে। কিছু না বলে মৃন্ময়ী তার মোবাইলটা আমার দিকে এগিয়ে দিল। স্ক্রীনে আমার নাম্বার থেকে পাঠানো একটা মেসেজ ভাসছে।
মেসেজে লিখা আছে, "প্লিজ তিশা, তুমি আমাকে ভুল বুঝছো শুধু শুধু। এই ছোট্ট একটা কারণে তুমি আমার সাথে একবছরের রিলেশন ভেঙ্গে দিতে পারোনা। তুমি মৃন্ময়ীকে আমার সাথে দেখে ভুল কিছু ভেবে বসে আছো। মৃন্ময়ী তো আমার কাজিন বোন হয়। আমি সেদিন ওকে কলেজে এগিয়ে দিতে গেছিলাম শুধু।"
এর পরপরই আমার নাম্বার থেকে পাঠানো দ্বিতীয় আরেকটা মেসেজ আছে। এই মেসেজে লিখা, "মৃন্ময়ী প্লীজ আগের মেসেজটা তুমি পড়োনা, ওটা তোমার কাছে ভুলে চলে গেছে। ওটা ডিলিট করে দাও প্লিজ।"
মেসেজ দেখে আমার মাথায় হাত। এই মেসেজ আমি পাঠাইনি কিছুতেই। আমি কিছু বলার আগেই মৃন্ময়ী গর্জে উঠলো, "এই ব্যাটা এই, আমি তোর বোন হই শালা? তিশা মেয়েটা কে? আমার সাথে তোর রিলেশন একমাসের, আর ওই মেয়ের সাথে একবছর ধরে রিলেশনে আছিস তুই? শালা লুচু, তোর মতো একটা ছ্যাসড়ার সাথে আমার রিলেশনে যাওয়াটাই ভুল ছিল!"
"বিশ্বাস করো মৃন্ময়ী আমি এই মেসেজ লিখিনি!"
"তুই না লিখলে শালা তোর বাপে লিখেছে! আমি যাচ্ছি। খবরদার আর কখনো যোগাযোগের চেষ্টা করবিনা আমার সাথে!"
মৃন্ময়ী চলে গেল। মৃন্ময়ীর শেষ কথাটা আমি বুঝতে পারলাম না। মৃন্ময়ী বলেছে মেসেজ আমি না লিখলে আমার বাপে লিখেছে, কিন্তু আব্বু কেন মৃন্ময়ীকে শুধুশুধু মেসেজ লিখবে এই কথাটা কিছুতেই আমার মাথায় ঢুকলোনা। তারপরই ঘটনার আসল রহস্য আমার কাছে পরিষ্কার হয়ে গেল। মেসেজ আমি বা আমার বাপে না লিখলেও কে বা কারা লিখেছে তা আমি বেশ ভাল করেই বুঝতে পারলাম।
বাসায় ফিরেই রিমিকে কানে ধরে আমার রুমে নিয়ে আসলাম। এইটাই হচ্ছে আসল কালপ্রিট। জিজ্ঞাসাবাদে রিমি স্বীকার করলো যে সে কাল রাতে আমি ঘুমানোর পর আমার মোবাইল থেকে মৃন্ময়ীকে মেসেজ দুইটা পাঠিয়েছে। রিমির এই কাজের পেছনের কারণ শুনে আমি হতবাক।
কারণটা হচ্ছে, রিমির ধারণা আমার গার্লফ্রেন্ড থাকাতে আমার টাকার একটা বড় অংশ অপচয় হচ্ছে গার্লফ্রেন্ডের পেছনে। আর তাতে নাকি আমার টাকায় তার অধিকার আর ভাগ দুইটাই কমে যাচ্ছে দিনদিন!
রাতে রিমিকে ক্লাসের পড়া বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য তার রুমে গিয়ে দেখি তার পড়ার টেবিলে রঙ্গিন প্রচ্ছদের ম্যাগাজিন সাইজের ছোট একটা বই পড়ে আছে।
বইয়ের নাম 'সম্পর্ক ভাঙ্গার ১০১ উপায়!' 😜
© Rayan Muntasir
বাড়ীর বড় ছেলে হওয়ার এই হচ্ছে সমস্যা। নিজের বলতে কিছু থাকেনা। টাকা থেকে শুরু করে সবকিছু ছোট ভাই বোনদের দখলে চলে যায়!
রিমি আজ সকালবেলা আমার মানিব্যাগ থেকে দু'শো টাকা মেরে দিয়েছে এটা অবশ্যই বড় একটা সমস্যা। কিন্তু এই মূহুর্তে এই সমস্যাটা নিয়ে আমি মাথা ঘামানোর কোন আগ্রহ পাচ্ছিনা। কারণ আমি অলরেডি এরচেয়ে বড় একটা সমস্যায় আছি!
সমস্যা ঘোরতর। সকালে ঘুম থেকে উঠে মোবাইল হাতে নিতেই মৃন্ময়ীর মেসেজটা পেলাম। মেসেজে মৃন্ময়ী আমাকে লুচু সম্বোধন করে লিখেছে, সে আর কিছুতেই আমার সাথে রিলেশন রাখতে চায় না। এবং আমি যেন কখনোই কোনভাবে তার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা না করি। তারপর ফেসবুক থেকে শুরু করে হোয়াটস এপ পর্যন্ত সব জায়গাতে সে আমাকে ব্লক দিয়ে রেখেছে। তার ফোনে কল দিয়েও কোন রেস্পন্স পাচ্ছিনা। মেসেজেরও কোন রিপ্লাই পাচ্ছিনা!
মৃন্ময়ীর আমাকে লুচু বলার কি কারণ থাকতে পারে সেটা আমার মাথায় আসছেনা। সে কি মনে করে এরকম একটা মেসেজ লিখলো তার কারণও আমার কাছে পরিষ্কার না। মৃন্ময়ীর সাথে যোগাযোগ না হওয়া পর্যন্ত এই রহস্যের সমাধান হবে না।
অনেকবার ট্রাই করার পর দুপুরের পর করে অবশেষে মৃন্ময়ী আমার ফোন ধরলো। সে আমার কোন কথাই শুনতে চায় না। অবশেষে অনেক কিছুর দোহাই দিয়ে তাকে বিকেলে আমার সাথে একবার দেখা করার জন্য রাজী করালাম কোনমতে।
মৃন্ময়ী রেগে অগ্নিমূর্তি ধারণ করে আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। আমি বোকার মতো তাকিয়ে আছি তার দিকে। কিছু না বলে মৃন্ময়ী তার মোবাইলটা আমার দিকে এগিয়ে দিল। স্ক্রীনে আমার নাম্বার থেকে পাঠানো একটা মেসেজ ভাসছে।
মেসেজে লিখা আছে, "প্লিজ তিশা, তুমি আমাকে ভুল বুঝছো শুধু শুধু। এই ছোট্ট একটা কারণে তুমি আমার সাথে একবছরের রিলেশন ভেঙ্গে দিতে পারোনা। তুমি মৃন্ময়ীকে আমার সাথে দেখে ভুল কিছু ভেবে বসে আছো। মৃন্ময়ী তো আমার কাজিন বোন হয়। আমি সেদিন ওকে কলেজে এগিয়ে দিতে গেছিলাম শুধু।"
এর পরপরই আমার নাম্বার থেকে পাঠানো দ্বিতীয় আরেকটা মেসেজ আছে। এই মেসেজে লিখা, "মৃন্ময়ী প্লীজ আগের মেসেজটা তুমি পড়োনা, ওটা তোমার কাছে ভুলে চলে গেছে। ওটা ডিলিট করে দাও প্লিজ।"
মেসেজ দেখে আমার মাথায় হাত। এই মেসেজ আমি পাঠাইনি কিছুতেই। আমি কিছু বলার আগেই মৃন্ময়ী গর্জে উঠলো, "এই ব্যাটা এই, আমি তোর বোন হই শালা? তিশা মেয়েটা কে? আমার সাথে তোর রিলেশন একমাসের, আর ওই মেয়ের সাথে একবছর ধরে রিলেশনে আছিস তুই? শালা লুচু, তোর মতো একটা ছ্যাসড়ার সাথে আমার রিলেশনে যাওয়াটাই ভুল ছিল!"
"বিশ্বাস করো মৃন্ময়ী আমি এই মেসেজ লিখিনি!"
"তুই না লিখলে শালা তোর বাপে লিখেছে! আমি যাচ্ছি। খবরদার আর কখনো যোগাযোগের চেষ্টা করবিনা আমার সাথে!"
মৃন্ময়ী চলে গেল। মৃন্ময়ীর শেষ কথাটা আমি বুঝতে পারলাম না। মৃন্ময়ী বলেছে মেসেজ আমি না লিখলে আমার বাপে লিখেছে, কিন্তু আব্বু কেন মৃন্ময়ীকে শুধুশুধু মেসেজ লিখবে এই কথাটা কিছুতেই আমার মাথায় ঢুকলোনা। তারপরই ঘটনার আসল রহস্য আমার কাছে পরিষ্কার হয়ে গেল। মেসেজ আমি বা আমার বাপে না লিখলেও কে বা কারা লিখেছে তা আমি বেশ ভাল করেই বুঝতে পারলাম।
বাসায় ফিরেই রিমিকে কানে ধরে আমার রুমে নিয়ে আসলাম। এইটাই হচ্ছে আসল কালপ্রিট। জিজ্ঞাসাবাদে রিমি স্বীকার করলো যে সে কাল রাতে আমি ঘুমানোর পর আমার মোবাইল থেকে মৃন্ময়ীকে মেসেজ দুইটা পাঠিয়েছে। রিমির এই কাজের পেছনের কারণ শুনে আমি হতবাক।
কারণটা হচ্ছে, রিমির ধারণা আমার গার্লফ্রেন্ড থাকাতে আমার টাকার একটা বড় অংশ অপচয় হচ্ছে গার্লফ্রেন্ডের পেছনে। আর তাতে নাকি আমার টাকায় তার অধিকার আর ভাগ দুইটাই কমে যাচ্ছে দিনদিন!
রাতে রিমিকে ক্লাসের পড়া বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য তার রুমে গিয়ে দেখি তার পড়ার টেবিলে রঙ্গিন প্রচ্ছদের ম্যাগাজিন সাইজের ছোট একটা বই পড়ে আছে।
বইয়ের নাম 'সম্পর্ক ভাঙ্গার ১০১ উপায়!' 😜
© Rayan Muntasir