শনিবার, জানুয়ারী ১৮, ২০১৪

মিলাদুন্নবীর ইতিহাস ও ভ্রান্ত ধারনা


মিশরের ইসমাঈলীয় শাসকগণ দ্বারা প্রবর্তিত হলেও ঈদে মীলাদুন্নবী উদযাপনকে সমস্ত মুসলিম বিশ্বে অন্যতম উৎসবে পরিণত করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় অবদান ইবরিলের শাসক আবু সাঈদ কূকুবূরীর। তাঁকেই আমরা মীলাদ অনুষ্ঠানের প্রকৃত প্রবর্তক বলে মনে করতে পারি। এর অন্যতম প্রমাণ হলো ৪র্থ হিজরী শতকে মিশরে এই উদযাপন শুরু হলে তার কোন প্রভাব বাইরের মুসলিম সমাজগুলোতে পড়েনি। এমনকি পরবতী ২০০ বৎসরের মধ্যেও আমরা মুসলিম বিশ্বের অন্য কোথাও এই উৎসব পালন করতে দেখতে পাই না। অথচ ৭ম হিজরী শতকের শুরুতে কুকবূরী ইরবিলে ঈদে মীলাদুন্নবী উদযাপন শুরু করলে তা তৎকালীন মুসলিম সমাজগুলিতে সাড়া জাগায়। পরবর্তী ২০০ বৎসরের মধ্যে এশিয়া-আফ্রিকার বিভিন্ন মুসলিম সমাজে অনেক মানুষ ঈদে মীলাদুন্নবী পালন করতে শুরু করে। যে সকল কর্ম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুগে, সাহাবী, তাবেয়ী ও তাবে তাবেয়ীদের যুগে ধর্মীয় কর্ম, আচার বা উৎসব হিসাবে প্রচলিত, পরিচিত বা আচরিত ছিল না, পরবর্তী যুগে মুসলিম সমাজে ধর্মীয় কর্ম হিসাবে প্রচলিত হয়েছে সে সকল কাজ কখনো পরবর্তী যুগের মুসলিমদের জন্য আল্লাহর নৈকট্য লাভের মাধ্যম হতে পারে না।যেহেতু মিশরের শাসকগণ ও পরবর্তীকালে আবু সাঈদ কূকবুরী প্রবর্তিত ঈদে মীলাদুন্নবী জাতীয় কোন অনুষ্ঠান রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুগে, সাহাবী, তাবেয়ী ও তাবে তাবেয়ীদের যুগে প্রচলিত বা পরিচিত ছিল না তাই স্বভাবতই তা বিদ‘আত ও পরিত্যাজ্য। সাহাবীগণ, তাবেয়ীগণ তাঁদের প্রচন্ডতম নবীর ভালবাসা সত্ত্বেও কখনো তাঁদের আনন্দ এভাবে উৎসব বা উদযাপনের মাধ্যমে প্রকাশ করেন নি, কাজেই পরবর্তী যুগের মুসলিমদের জন্যও তা শরী‘আত সঙ্গত হবে না। পরবর্তী যুগের মুসলিমদের উচিৎ প্রথম যুগের মুসলিমদের ন্যায় সার্বক্ষণিক সুন্নাত পালন, সীরাত আলোচনা, দরুদ ও সালাম এবং আন্তরিক ভালবাসার মাধ্যমে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি ভালবাসা ও শ্রদ্ধা জানানো। অমুসলিমদের অনুকরণে জন্মদিন পালনের মাধ্যমে রাসূলের ভালবাসা প্রকাশ পায় না। বরং এ সকল অনুষ্ঠানের প্রসার সাহাবীদের ভালবাসা, ভক্তি ও আনন্দ প্রকাশের পদ্ধতিকে হেয় প্রতিপন্ন করার মানসিকতা সৃষ্টি করে, কারণ যারা এ সকল অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক ভালবাসা ও আনন্দ প্রকাশ করবেন, তাঁদের মনে হতে থাকবে যে সাহাবীদের মত নীরব, অনানুষ্ঠানিক, সার্বক্ষণিক ভালবাসা ও ভক্তি প্রকাশ পদ্ধতির চেয়ে তাদের পদ্ধতিটাই উত্তম। যা নিঃসন্দেহে ভ্রষ্টতা। এ ব্যাপারে বহু আলেম সাবধান করে গেছেন। যেমন, সপ্তম-অষ্টম হিজরী শতাব্দীর অন্যতম আলেম ইমাম আল্লামা তাজুদ্দীন উমর ইবন আলী আল-ফাকেহানী (মৃত্যু: ৭৩৪ হিজরী/ ১৩৩৪খ্রি:), আল্লামা আবু আব্দুল্লাহ মুহম্মদ ইবন মুহম্মদ ইবনুল হাজ্জ (৭৩৭হি:/১৩৩৬খ্রি:), ৮ম হিজরী শতকের প্রখ্যাত আলেম আবু ইসহাক ইব্রাহীম ইবন মূসা ইবন মুহাম্মাদ আশ-শাতিবী (মৃত্যু ৭৯০ হি:) ও অন্যান্য উলামায়ে কেরাম।[70]আমরা আগেই বলেছি যে, জন্মদিন পালনের ন্যায় মৃত্যুদিন পালনও অনারব সংস্কৃতির অংশ, যা পরবর্তী সময়ে মুসলিম সমাজেও প্রচলিত হয়ে যায়। রবিউল আউয়াল মাস যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্ম মাস, তেমনি তাঁর মৃত্যুর মাসও বটে। তাই এটি দুঃখের কারণ হতে পারে। কোন কোন বর্ণনা থেকে দেখা যায় যে, ৭ম হিজরী শতাব্দীর শেষে এবং ৮ম হিজরী শতকের প্রথমাংশেও মীলাদুন্নবী পালন অনেক দেশের মুসলিমদের কাছে অজানা ছিল, তারা জন্মদিন পালন না করে মৃত্যু দিবস পালন করতেন। বস্ত্তত: এ সবই গর্হিত বিদ‘আত। ইসলামে বিদ‘আতের কোন স্থান নেই। তাই জন্ম দিবস বা মৃত্যু দিবস এসব পালন থেকে আমাদেরকে দূরে থাকতে হবে। আল্লাহই আমাদের সহায় হোন ও তৌফিক দিন। দো‘আ করি তিনি দয়া করে আমার এ ক্ষুদ্র প্রচেষ্টাকে কবুল করেন। আল্লাহর মহান রাসূল, হাবীব ও খলীল মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহর উপর অগণিত সালাত ও সালাম। আল্লাহুম্মা সাল্লি আলাইহি ওয়া সাল্লিম মা যাকারুয যাকিরুন ওয়া গাফালা আন যিকরিহিল গাফিলূন। বিস্তারিত দেখুন: আশ-শাতেবী, আবু ইসহাক ইবরাহীম, আল-ই’তিসাম (সৈাদী আরব, আল-খুবার, দারু ইবনে আফফান, ৪র্থ সংস্করণ ১৯৯৫) ২/৫৪৮, আস সালেহী, আস-সীরাতুশ শামিয়্যা, প্রাগুক্ত ১/৩৬২-৩৭৪।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

সম্পর্ক ভাঙ্গার ১০১ উপায়

মানিব্যাগটা হাতে নিতেই বুঝতে পারলাম এখান থেকে বেশ কিছু টাকা হাত সাফাই হয়েছে। গুনে দেখি দুইশো টাকা মতো গায়েব। আমার মানিব্যাগ থেকে টাকা গায়েব...