কিছু ব্যাপার আমাদের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ , কিছু ব্যাপার অত্যাবশ্যক । আমাদের বুঝতে হবে কোনটা কাজটা আমাদের আগে করা উচিত কোন কাজটি পরে ।তাই এই লেখাটি আশা করি আপনাদের সাহায্য করবে ।
১। সকল অর্ধসমাপ্ত কাজের সমাপ্তি করা যে কোন ভাবেই হোক
বর্তমান সময়ে দেখা যায় যে আমরা সহযেই একটি কাজের উপর থেকে মনযোগ হারিয়ে ফেলি । সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো এর মধ্যে অন্যতম যারা আমাদের দৈনন্দিন কাজের উপর প্রভাব ফেলে । আসলে আমরা চাই যে সব গুলো চিঠি , ইমেইল এবং দৈনন্দিন কাজের তালিকার কাজ একসাথেই করতে । কিন্তু এসব যোগাযোগ মাধম্যের কারনে হাতের একটা কাজ শেষ করে আরেকটা কাজ শুরু করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায় । কিভাবে ? ধরুন …
- আপনি একটি রিপোর্ট লেখা শুরু করেছিলেন । কিন্তু এর ফাকে ফাকে ফেসবুক , ইউটিউবে আপডেট চেক করতে করতেই আপনার লেখাটা আর শেষ হলো না । অথচ আপডেট চেক করার চেয়ে কিন্তু রিপোর্টটি তৈরী করা গুরুত্বপূর্ণ ছিলো ।
- আপনি একটি দৈনন্দিন খাবারের তালিকা তৈরী করলেন । কিন্তু দু’দিন বাদেই কোথাও পড়লেন যে ঐ ভাবে খাওয়া দেওয়া করলে তাড়াতাড়ি ওজন কমিয়ে একই রকম স্বাস্থ্য ধরে রাখা সম্ভব । আপনি তাই আগের তালিকা বাদ দিয়ে নতুন ভাবে শুরু করলেন । কিছুদিন বাদেই দেখলেন যে এটা ভালই কাজ করছে ! তাই আবার খোজা শুরু করলেন আরো ভালো কি পাওয়া যায় ।
- দেখা যায় কারো সাথে কথা বলছিলেন , এরই মাঝে একটা মেইল আসলো । আপনি কথা বলা থামিয়ে মেইল দেখায় মগ্ন হয়ে গেলেন ।
এইভাবেই দেখা যায় আমাদের অনেক অর্ধ সমাপ্ত কাজ থেকেই যায় । একটা সময় দেখা যায় এই অর্ধ সমাপ্ত কাজ গুলোই যতটা না সময় লাগার কথা তার চেয়ে বেশি সময় লেগে যায় । ফলাফল হিসেবে দেখা যায় যে ছুটির আগে আপনাকে এই কাজগুলোই তাড়াহুড়োর মধ্যে করে ফেলতে হচ্ছে । ফলে কাজগুলো সুন্দর করে সম্পন্ন করেতে পারছেন না । অনেক গুরুত্বপূর্ন ব্যাপারও হয়তো খেয়ালও করতে পারেননি । এর জন্য পরবর্তিতে ভুগতে হতে হয় ।
শুধু মাত্র একটি কাজের উপরই একই সময় মনোযোগ দিন ।
এই জন্য প্রথমেই দিনের একটা অংশ গুরুত্বপূর্ন কাজ গুলোর জন্য আলাদা করে ফেলুন । ঐ সময় যেখানে কাজ করবেন , তার আশেপাশেও ফোন রাখবেন না এবং ফেসবুক , মেইল ইত্যাদি একদম বন্ধ করে রাখুন যেন এগুলো জ্বালাতন করতে না পারে ।
এসব যোগাযোগ মাধ্যম গুলো আপনার কাজে সবসময়ই ব্যাঘাত সৃষ্টি করে থাকে । তবে কাজ শেষে অবশ্যই ফোন ও অন্যান্য যোগাযোগ মাধ্যম গুলো ঘুরে আসবেন । কারন অনেক গুরুত্বপূর্ন কাজ এর মধ্যমেও এসে পড়তে পারে । এভাবেই এসব থেকে কিছুটা সময় দূরে থেকে আপনি সহজেই আপনার অর্ধ-সমাপ্ত কাজটি সমাধা করতে পারেন ।
এসব যোগাযোগ মাধ্যম গুলো আপনার কাজে সবসময়ই ব্যাঘাত সৃষ্টি করে থাকে । তবে কাজ শেষে অবশ্যই ফোন ও অন্যান্য যোগাযোগ মাধ্যম গুলো ঘুরে আসবেন । কারন অনেক গুরুত্বপূর্ন কাজ এর মধ্যমেও এসে পড়তে পারে । এভাবেই এসব থেকে কিছুটা সময় দূরে থেকে আপনি সহজেই আপনার অর্ধ-সমাপ্ত কাজটি সমাধা করতে পারেন ।
২। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজটি আগে করুন ।
দ্বিধা দ্বন্ধ লেগেই থাকবে জীবনে । এবং তা আপনার সময়ও প্রচুর অপচয় করাবে । আপনার ইচ্ছা শক্তিকে দমিয়ে রাখে এই দ্বিধা দ্বন্ধ । তাই দিনের শুরুতেই আপনাকে প্রথমেই একটি সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে ।
সত্যি বলতে কি , আমার কাজের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে আমি সহজেই দমে যাই , আমার ইচ্ছে শক্তি অনেক কম এবং সহজেই ভেঙ্গে পড়ি । তাই কোন কাজটা সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ তা বের করার চেষ্টা শুরু করলাম এবং মনে প্রানে তা করা শুরু করলাম । যদি দেখতাম যে আমার একটা প্রতিবেদন লিখতে হবে আজই , তখন আমি সকালে যত তাড়াতাড়ি পারি এক গ্লাস পানি খেয়েই লেখা শুরু করে দিতাম । তাই , যদি কোন কঠিন কাজ থাকে তা অবশ্যই শুরুতেই শেষ করে দিন । সারাটা দিন নিজেকে অনেক হালকা লাগবে ।
কিন্তু যদি গুরুত্বপূর্ণ কাজটি প্রথমেই না করে অন্য কোন সময়ের জন্য রেখে দেন , তবে দেখা যাবে ঐ দিনটা ঐ কাজের চিন্তাতেই নষ্ট হচ্ছে । তাই যত দ্রুত সম্ভব দিনের শুরুতেই গুরুত্বপূর্ণ কাজের সমাপ্তি করুন , যদি দিনটার কোন পরিকল্পনা না ও থাকে এবং দিন শেষে একটি প্রশান্তিময় ঘুম পরের দিনের জন্য আপনাকে তৈরী করে দিবে ।
৩। সময়মাফিক চলতে হবে , লক্ষ্য সীমিত করে হলেও
সময়মাফিক চলাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ । তাই নিজেকে সময়ের সাথে খাপ খাইয়ে রাখতে হবে , লক্ষ্যের সাথে না । গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো সময়মাফিক করলেই বেশি ভালো হয় । যদি এমন হয় “আজকেই শেষ সময় “ তবে তা ভিন্ন কথা ।
যখন আপনি এভাবে দিনের পর দিন একই ভাবে সময়মাফিক কাজ করে যাবেন , দেখবেন চাপ অনেকটাই কম থাকবে । সময়মেনে কাজ করাটা সত্যিকার অর্থেই একেবারে একটা কাজ করে ফেলার চেয়ে সহজ । সাধারনত কাউকে তার কর্মপরিকল্পনা জিজ্ঞাস করুন , দেখবেন যে সে হয়তো বলবে যে আমি এই এই দিন কাজ করি এবং আমি আমার কাজ কখনই শেষ করতে পারি না । কারন তার কর্মপরিকল্পনা সে কল্পনার মত করে করে । আসলে কর্মপরিকল্পনা করতে হবে বাস্তবতা বুঝে । আপনার কোন কাজ কখন গুরুত্বপূর্ন , কোনটা কখন করলে সুবিধা হবে এই সব পরিকল্পনা করে আগাতে হবে । বুঝতে হবে আপনার কাজের গুরুত্ব ও সেই রকম গুরুত্ব অনুসারেই সাজাতে হবে দিনের কর্মপরিকল্পনা । তা না হলে আপনি বিফল হবেন ও সময়মাফিক কাজ করার আগ্রহ হারিয়ে যাচ্ছেতাই ভাবে কাজ করা শুরু করবেন । যা আপনার লক্ষ্য পৌছাতে বাধা প্রদান করবে । তাই আপনার প্রাথমিক লক্ষ্যই থাকতে হবে যে আপনি যে করেই হোক আপনার যেই কর্মপরিকল্পনা রয়েছে তাতে অটুট থাকবেন ।
এই ধরুন , আজকে চিন্তা করলেন যে আপনি আগামীকাল ঘুম থেকে উঠে পরিস্কার হয়েই বের হবেন এবং সকালে দৌড়াবেন , ব্যায়াম করবেন । কিন্তু দেখা গেলো কি ! আপনি সারা রাত ল্যপটপ নিয়ে পড়েছিলেন , ঘুমালেন দেরী করে , উঠলেন দেরী করে । তারপর আবার যেতে হলো অফিসে । তাতে কাজের কাজ কিছুই হলো না , আবার সেই একই রকম গেলো দিনটা ।
প্রথমত , আপনি চিন্তা করবেন আপনার সময় নাই , কিছু সময় আছে যা দিয়ে আপনি ঘরের কিছু টুকটাক কাজ করবেন । সুতরাং আপনার দিন আবার আগের মতই যাবে । আপনার শরীরের যত্ন নেয়া হবে না , পরিবারকেও সময় দেয়া হবে না ।
দ্বিতীয়ত , আপনি চিন্তা করলেন যাই হোক , আপনি যেভাবেই হোক দিনের কাজ দিনে শেষ করে ফেলবেন । কাজের সময় সামাজিক মাধ্যমে ঢু মারবেন না । সময় নষ্ট করবেন না । একদম সময়মাফিক চলবেন । বাসায় এসে পরিবারকে সময় দিবেন । রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমাবেন । সকালে ব্যায়াম করবেন । অর্থাৎ গুরুত্বপূর্ণ কাজের ফাকে যদি কিছুটা অবসর সময় পাওয়া যায় তবেই সামাজিক মাধ্যমে সময় দিবেন । কিছুটা সময় গান দেখবেন অথবা আপনার শখের কাজটা করবেন । শরীর , মন সবই ভালো থাকবে যদি সময়মাফিক চলেন । এভাবেই জীবনের সফলতা আসতে পারে ।
সুতরাং আজকের কাজ আজকেই করুন যতটুকু সুযোগ আশা করেছিলেন , যদি তারচেয়েও কম পেয়ে থাকেন ।
সময়মাফিক কাজ কিভাবে করা যায় তার জন্য কিছু পরামর্শ
বর্তমানে সবাই কম বেশি স্মার্ট ফোন ব্যবহার করেন । সেখানে সময়মাফিক চলার জন্য হাজারটা Time management apps পাওয়া যায় । তার কোনটা ব্যাবহার করে প্রতিদিন কি কি কাজ তা মনে করিয়ে দেয়ার জন্য Reminder ব্যবহার করতে পারেন । সেখানে তালিকা করে করে দিনের কি কি কাজ করতে হবে তার Reminder বানিয়ে ফেলতে পারেন । আসলে আমার ক্ষেত্রে এই সময়মাফিক চলার ব্যাপারটা আরো সহজ হয় যদি আপনি আপনার কাজের গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারেন । তখন এমনিতেই সময়মাফিক চলতে পারবেন ।
তারপরও তিনটি জিনিসের উপর আবার নজর দেই …
১- সকল অর্ধ-সমাপ্ত কাজ একবারে বসেই শেষ করা । অন্য কোন কিছুর দিকে না তাকিয়ে ।
২- গুরুত্বপূর্ণ কাজ সবার আগে আগে শেষ করে ফেলা ।
৩- নিজের সময়সূচি আকড়ে ধরে থাকা এবং তা অনুসরন করার অভ্যাস করা তা যত ছোট কাজই হোক না কেন ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন