সোমবার, জানুয়ারী ২৫, ২০১৬

ইবনে সিনা

যিনি  কঠোর জ্ঞান সাধনা ও অধ্যবসয়ের মধ্যে দিয়ে কাটিয়ে ছিলেন সারাটা জীবন , এক রাজপরিবারে জন্মগ্রহণ করেও ধন-সম্পদ, ক্ষমতা, ভোগ-বিলাস ও প্রাচুর্যের মোহ যাকে আকৃষ্ট করতে পারেনি , যিনি ছিলেন মুসলমানদের গৌরব ... তিনি হলেন ইবনে সিনা । তাঁর আসল নাম আবু আলী আল হুসাইন ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে সিনা । তিনি সাধারনত ইবনে সিনা , বু-আলী সিনা এবং আবু আলী সিনা নামেই অধিক পরিচিত । 

Image result for ibn sina
Ibn Sina


    ৯৮০ খৃষ্টাব্দে তুর্কীস্তানের বিখ্যাত শহর বোখরার নিকটবর্তী আফসানা গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন । তাঁর পিতা আব্দুল্লাহ এবং মাতা সিতারা বিবি । পিতা আব্দুল্লাহ ছিলেন খোরসানের শাসনকর্তা । জন্মের কিছু কাল পরই তিনি ইবনে সিনাকে রোখারায় নিয়ে আসেন এবং তাঁর লেখাপড়ার সু-ব্যাবস্থা করেন । ছোট বেলা থেকেই তাঁর মধ্যে লুকিয়ে ছিলো অসামান্য মেধা ও প্রতিভা । মাত্র ১০ বছর বয়সেই তিনি পবিত্র কোরআনের ৩০ পারা মুখস্থ করে ফেলেন । তাঁর ৩ জন গৃহ শিক্ষক ছিলো । তাদের মধ্যে ইসমাইল সূফী তাঁকে শিক্ষা দিতেন ধর্মতত্ত্ব , ফিকাহ শাস্ত্র ও তাফসীর । মাহমুদ মাসসাহ তাঁকে শিক্ষা দিতেন গণিত শাস্ত্র এবং বিখ্যাত দার্শনিক আল না’তেলী শিক্ষা দিতেন দর্শন , ন্যায় শাস্ত্র , জ্যামিতি , টলেমির আল মাজেস্ট , জাওয়াহেরে মান্তেক প্রভৃতি । মাত্র ১৭ বছর বয়সে সকল জ্ঞান তিনি লাভ করে ফেলেন । বিখ্যাত দার্শনিক আল না’তেলীর নিকট এমন কোন জ্ঞান আর অবশিষ্ট ছিল না , যা তিনি ইবনে সিনাকে শিক্ষা দিতে পারবেন । এরপর তিনি ইবনে সিনাকে নিজের স্বাধীন মত গবেষ্ণা করার পরামর্শ দেন । 


এবার তিনি চিকিৎসা বিদ্যা সম্পর্কিত কিতাব সংগ্রহ করে গবেষণা করতে শুরু করেন । ইবনে সিনা তাঁর আত্মজীবনীতে লিখেছেন যে , এমন বহু দিবা রাত্রি অতিবাহিত হয়েছে যার মধ্যে তিনি ক্ষনিকের জন্যও ঘুমাননি । কেবলমাত্র জ্ঞান সাধনার মধ্যেই ছিল তাঁর মনোনিবেশ । যদি কখনো কোন বিষয়ে সমস্যার সম্মুখীন হতেন তখনই তিনি মসজিদে গিয়ে নফল নামায আদায় করতেন এবং সেজদায় পড়ে আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি করে বলতেন , “ হে আল্লাহ , তুমি আমার জ্ঞানের দরজা খুলে দাও । জ্ঞান লাভ ছাড়া পৃথিবীতে আমার আর কোন কামনা নেই ।” তারপর গৃহে এসে আবার গবেষণা শুরু করতেন । ক্লান্তিতে যখন ঘুমিয়ে পড়তেন তখন অমীমাংসিত প্রশ্নগুলো  স্বপ্নের ন্যায় তাঁর মনের মধ্যে ভাসতো এবং তাঁর জ্ঞানের দরজা যেন খুলে যেত । হঠাৎ ঘুম থেকে জেগে উঠেই সমস্যাগুলোর সমাধান পেয়ে যেতেন । মাত্র ১৮ বছর বয়সে তিনি চিকিৎসা বিদ্যায় ইন্দ্রজালের সৃষ্টি করেন এবং চতুর্দিকে তাঁর সুনাম ছড়িয়ে পড়ে । এ সময় বোখারার বাদশাহ নূহ-ব ইন-মনসুর এক কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েন । দেশের বিখ্যাত চিকিতসকগণ তাঁকে সুস্থ করে তুলতে যখন ব্যারথ হন তখন ইবনে সিনা মাত্র কয়েকদিন চিকিতসা করে বাদশাহকে সুস্থ করে তোলেন । বাদশাহ কৃতজ্ঞতাস্বরূপ তাঁর জন্য রাজ দরবারের কুতুবখানার সব কিতাব মুখস্থ করে ফেলেন । জ্ঞান বিজ্ঞানের এমন কোন বিষয় বাকি ছিল না যা তিনি জানেন না । মাত্র ১৯ বছর বয়সে তিনি বিজ্ঞান , দর্শন , ইতিহাস , অর্থনীতি , রাজনীতি , কণিতশাস্ত্র , জ্যামিতি , ন্যায়শাস্ত্র , খোদাতত্ত্ব , চিকিতসা শাস্ত্র , কাব্য , সাহিত্য প্রভৃতি বিষ্যে অসীম জ্ঞানের অধিকারী হন । ২১ বছর বয়সে 'আল মজমুয়া' নামক একটি বিশ্বকোষ রচনা করেন , যার মধ্যে গণিত শাস্ত্র ব্যতীত প্রায় সকল বিষ্যায়াদি লিপিবদ্ধ করেছিলেন ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

সম্পর্ক ভাঙ্গার ১০১ উপায়

মানিব্যাগটা হাতে নিতেই বুঝতে পারলাম এখান থেকে বেশ কিছু টাকা হাত সাফাই হয়েছে। গুনে দেখি দুইশো টাকা মতো গায়েব। আমার মানিব্যাগ থেকে টাকা গায়েব...