যিনি কঠোর জ্ঞান সাধনা ও অধ্যবসয়ের মধ্যে দিয়ে কাটিয়ে ছিলেন সারাটা জীবন , এক রাজপরিবারে জন্মগ্রহণ করেও ধন-সম্পদ, ক্ষমতা, ভোগ-বিলাস ও প্রাচুর্যের মোহ যাকে আকৃষ্ট করতে পারেনি , যিনি ছিলেন মুসলমানদের গৌরব ... তিনি হলেন ইবনে সিনা । তাঁর আসল নাম আবু আলী আল হুসাইন ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে সিনা । তিনি সাধারনত ইবনে সিনা , বু-আলী সিনা এবং আবু আলী সিনা নামেই অধিক পরিচিত ।
Ibn Sina |
৯৮০ খৃষ্টাব্দে তুর্কীস্তানের বিখ্যাত শহর বোখরার নিকটবর্তী আফসানা গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন । তাঁর পিতা আব্দুল্লাহ এবং মাতা সিতারা বিবি । পিতা আব্দুল্লাহ ছিলেন খোরসানের শাসনকর্তা । জন্মের কিছু কাল পরই তিনি ইবনে সিনাকে রোখারায় নিয়ে আসেন এবং তাঁর লেখাপড়ার সু-ব্যাবস্থা করেন । ছোট বেলা থেকেই তাঁর মধ্যে লুকিয়ে ছিলো অসামান্য মেধা ও প্রতিভা । মাত্র ১০ বছর বয়সেই তিনি পবিত্র কোরআনের ৩০ পারা মুখস্থ করে ফেলেন । তাঁর ৩ জন গৃহ শিক্ষক ছিলো । তাদের মধ্যে ইসমাইল সূফী তাঁকে শিক্ষা দিতেন ধর্মতত্ত্ব , ফিকাহ শাস্ত্র ও তাফসীর । মাহমুদ মাসসাহ তাঁকে শিক্ষা দিতেন গণিত শাস্ত্র এবং বিখ্যাত দার্শনিক আল না’তেলী শিক্ষা দিতেন দর্শন , ন্যায় শাস্ত্র , জ্যামিতি , টলেমির আল মাজেস্ট , জাওয়াহেরে মান্তেক প্রভৃতি । মাত্র ১৭ বছর বয়সে সকল জ্ঞান তিনি লাভ করে ফেলেন । বিখ্যাত দার্শনিক আল না’তেলীর নিকট এমন কোন জ্ঞান আর অবশিষ্ট ছিল না , যা তিনি ইবনে সিনাকে শিক্ষা দিতে পারবেন । এরপর তিনি ইবনে সিনাকে নিজের স্বাধীন মত গবেষ্ণা করার পরামর্শ দেন ।
এবার তিনি চিকিৎসা বিদ্যা সম্পর্কিত কিতাব সংগ্রহ করে গবেষণা করতে শুরু করেন । ইবনে সিনা তাঁর আত্মজীবনীতে লিখেছেন যে , এমন বহু দিবা রাত্রি অতিবাহিত হয়েছে যার মধ্যে তিনি ক্ষনিকের জন্যও ঘুমাননি । কেবলমাত্র জ্ঞান সাধনার মধ্যেই ছিল তাঁর মনোনিবেশ । যদি কখনো কোন বিষয়ে সমস্যার সম্মুখীন হতেন তখনই তিনি মসজিদে গিয়ে নফল নামায আদায় করতেন এবং সেজদায় পড়ে আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি করে বলতেন , “ হে আল্লাহ , তুমি আমার জ্ঞানের দরজা খুলে দাও । জ্ঞান লাভ ছাড়া পৃথিবীতে আমার আর কোন কামনা নেই ।” তারপর গৃহে এসে আবার গবেষণা শুরু করতেন । ক্লান্তিতে যখন ঘুমিয়ে পড়তেন তখন অমীমাংসিত প্রশ্নগুলো স্বপ্নের ন্যায় তাঁর মনের মধ্যে ভাসতো এবং তাঁর জ্ঞানের দরজা যেন খুলে যেত । হঠাৎ ঘুম থেকে জেগে উঠেই সমস্যাগুলোর সমাধান পেয়ে যেতেন । মাত্র ১৮ বছর বয়সে তিনি চিকিৎসা বিদ্যায় ইন্দ্রজালের সৃষ্টি করেন এবং চতুর্দিকে তাঁর সুনাম ছড়িয়ে পড়ে । এ সময় বোখারার বাদশাহ নূহ-ব ইন-মনসুর এক কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েন । দেশের বিখ্যাত চিকিতসকগণ তাঁকে সুস্থ করে তুলতে যখন ব্যারথ হন তখন ইবনে সিনা মাত্র কয়েকদিন চিকিতসা করে বাদশাহকে সুস্থ করে তোলেন । বাদশাহ কৃতজ্ঞতাস্বরূপ তাঁর জন্য রাজ দরবারের কুতুবখানার সব কিতাব মুখস্থ করে ফেলেন । জ্ঞান বিজ্ঞানের এমন কোন বিষয় বাকি ছিল না যা তিনি জানেন না । মাত্র ১৯ বছর বয়সে তিনি বিজ্ঞান , দর্শন , ইতিহাস , অর্থনীতি , রাজনীতি , কণিতশাস্ত্র , জ্যামিতি , ন্যায়শাস্ত্র , খোদাতত্ত্ব , চিকিতসা শাস্ত্র , কাব্য , সাহিত্য প্রভৃতি বিষ্যে অসীম জ্ঞানের অধিকারী হন । ২১ বছর বয়সে 'আল মজমুয়া' নামক একটি বিশ্বকোষ রচনা করেন , যার মধ্যে গণিত শাস্ত্র ব্যতীত প্রায় সকল বিষ্যায়াদি লিপিবদ্ধ করেছিলেন ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন