সোমবার, জানুয়ারী ১৮, ২০১৬

নীল দুনিয়া

অনেকক্ষণ ধরেই সুযোগ খুজছে রনয় , চাচার চোখ ফাকি দিয়ে কিভাবে বাসা থেকে বের হওয়া যায় । কিন্তু ব্যাপারটা খুবই কঠিন হয়ে দাড়াচ্ছে তার জন্য । এখন তো এক রকম বডি গার্ড ছাড়া বাসা থেকে বেরই হতে পারে না সে । হয় চাচাতো ভাই , নাহলে চাচা বা চাচী নিজে গিয়ে স্কুল , কোচিং এ দিয়ে আসবে , নিয়ে আসবে । এত বড় একটা ছেলে , তার সাথে কাউকে আসতে হয় ব্যাপারটা যখন বন্ধুমহল টের পায় , তা যে কি রকম বিভীষিকাময় ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায় তা চাচা-চাচী টাইপ মানুষ গুলোর বুঝার কথা না । বাবা মারা যাওয়ার পর মায়ের আচলের নিচেও তার বেশি দিন থাকা হয়নি । মা তার নিজের স্বার্থের কথা চিন্তা করে উন্নত জীবনের আশায় নিজের জন্য এক সঙ্গী ঠিক করে নিয়েছে । সেখানে তার ঠাই হয়নি ! কিন্তু মা তো !! কত ভালোবাসে সে মা কে , তা তো আর ঐ বড়লোক মানুষটা বুঝবে না । তাও সে মায়ের টানে চুপি চুপি মায়ের কাছে যায় , মায়ের কোলে মাথা রেখে একটু খানি সময় পার করে । আবার ঐ লোকটা বাসায় আসার আগেই চুপি চুপি বের হয়ে চলে আসে । কিন্তু আজ চাচাটা কেমন যেন রেগে আছে । সম্ভবত চাচাতো ভাইটার ভার্সিটিতে কিছু হয়েছে । কিন্তু তাতে রনয়ের কি ! রনয় তার মায়ের কাছে যেতে চায় । কিন্তু যদি তার চাচা টের পায় , তাহলে তার স্কুল কোচিং সব বন্ধ হয়ে যাবে । চার দেয়ালের ভিতর তাকে সারাজীবনের জন্য বন্দী হয়ে থাকতে হবে । রনয় বুকে কোল বালিশটা খুব জোরে চেপে ধরে রেখেছে । মনে হচ্ছে যদি একটা পাথর এনে বুকে চেপে রাখতে পারতো !! চাপা কান্নায় আরো কষ্ট হচ্ছে । কোল বালিশ আর বুকের মাঝে মা-বাবার ছবিসহ ফ্রেমটাও আছে । বুকে খুব ফ্রেমের চাপ লাগছে । আরো জোরে চেপে ধরতে চাইছে । পারলে ভিতরে ঢুকিয়ে ফেলে । ওর দুনিয়ায় ঐ ছবিটাই সম্বল । সব ভালোবাসা, দুঃখ-কষ্ট , হাসি , সুখ ... ওহ ! দুঃখিত ... হাসি সুখ তো ওর না ! এটা তো যাদের কিছু আছে , তাদের জন্য । রনয়ের জন্য এসবই Formalities !!
চাচা দোকানে গিয়েছে , চাচাতো ভাইটা তার রুমে ... নাহ ! চাচীও নেই । এই সুযোগ কে ছাড়ে । তাড়াতাড়ি বের হয়ে গেলো রনয় । রিকশা করে চলে আসলো বেইলী রোডে । এখন বাজে ৪ঃ৪৫ । পাঁচটা বাজলেই ঐ লোকটা অফিস থেকে বের হয়ে রওনা দিবে । তারাতারি মায়ের সাথে দেখা করে আসতে হবে ।
" মা ... মা ... " ঘরে মায়ের কোন সাড়া শব্দ নেই । আস্তে করে দরজাটা খুলে মায়ের বেড রুমে চলে আসলো রনয় । মা ঘুমিয়ে আছে । ফ্লোরে এক কৌটা টেবলেট পারে আছে । রনয়ের কেমন যেন লাগছে । কিছু একটা সন্দেহ হচ্ছে । মায়ের কাছে গিয়ে বসলো । হাতটা ধরলো । হাতটা খুব ঠান্ডা । রনয় পালস চেক করা শুরু করলো । নাহ ... অনেক দেরী হয়ে গেছে । বুক ফাটা কান্না আসছে তার । কিন্তু এমন কান্না সারা জীবন আটকিয়ে রেখে তার অভ্যাস হয়ে গিয়েছে রনয়ের । চোখে পানি আসছে না আর । মায়ের অন্য হাতে একটা কাগজ ছিলো । সেখানে সেই সঙ্গীর উদ্দেশ্যে কিছু লিখা ছিলো । যা ছিলো তার অর্থ ছিলো , রনয়ের মা অর্থ বিত্তের সুখের মাঝেই ছিলো , কিন্তু মনের সুখ বলে তার কিছুই ছিলো না । রনয়ের বাবা মারা যাবার পর রনয় ছাড়া আর কেউই তাকে ভালোবাসেনি । সে রনয়কেও কাছে রাখতে চাইলেও সেই উচ্চবিত্তের লোকটি রনয়কে পছন্দ করেনি । গুরুত্ব দেয়নি তার কোন ধরনের পছন্দ অপছন্দ । তার কাছে অর্থের মূল্য ছিলো , কিন্তু ভালোবাসার না । আর কেউ তাকে ফিরিয়ে নিবে না । তার আর কোন যাওয়ার যায়গাও অবশিষ্ট নেই । তাই রনয়ের মা তার "প্রিয়তম" এর কাছে চলে যাচ্ছে । সে যানে , রনয়ের বাবা তাকে ফিরিয়ে দিবে না । :)
বাসায় ঢুকার পরই দেখে চাচা-চাচী , চাচাতো ভাই দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে । সবার চোখেই অগ্নি দৃষ্টি । রনয় চাচার দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসির ভাব দেখালো । " আর যাবো না , উনিও বাবার কাছে চলে গেছেন । আর চিন্তা করতে হবে না আপনাদের । "

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

সম্পর্ক ভাঙ্গার ১০১ উপায়

মানিব্যাগটা হাতে নিতেই বুঝতে পারলাম এখান থেকে বেশ কিছু টাকা হাত সাফাই হয়েছে। গুনে দেখি দুইশো টাকা মতো গায়েব। আমার মানিব্যাগ থেকে টাকা গায়েব...